৪ জুল, ২০১৫

বাংলা ব্যাকরণ চর্চার ইতিহাস

বাংলা ব্যাকরণ চর্চার ইতিহাস

বাংলা ব্যাকরণ চর্চার ইতিহাস (১)- https://www.facebook.com/BengaliGrammar/posts/864631976907021

বাংলা ব্যাকরণ চর্চার ইতিহাস (২)- https://www.facebook.com/BengaliGrammar/posts/864632083573677

বাংলা ব্যাকরণ চর্চার ইতিহাস (৩)-https://www.facebook.com/BengaliGrammar/posts/864632193573666


১৭ জানু, ২০১৫

অনুশীলনী (ভাষা ও বাংলা ভাষা)

fvlv I evsjv fvlv †_‡K wKQz ˆbe©w³K cÖkœ I DËi|

ভাষা ও বাংলা ভাষা

     Ä ভাষার সংজ্ঞাঃ
          ¯ মানুষ তার বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি দ্বারা যে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকেই ভাষা বলে৷
        ¯ . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র মতে, ‘মানুষ্য জাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে তাকে ভাষা বলে৷
        ¯ . সুকুমার সেনের ম,মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনি সমষ্টিই ভাষা

Ä বাংলা ভাষার সংজ্ঞাঃ
¯ যে ভাষায় বাঙালি জাতি তারে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকে বাংলা ভাষা বলে৷

Ä বাংলা ভাষার উত্পত্তিঃ
বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রাচীন যে সাহিত্য নিদর্শন পাওয়া গেছে তার বয়স হাজার বছরেরও বেশি৷ প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা পরবর্তিত হয়ে মাগধী রূপ লাভ করে৷ এ মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উত্পত্তি৷ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র মতে, বাংলা ভাষার প্রথম লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায় ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে৷ অপর িদকে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলা সাহিত্যেও উত্পত্তি ৯৫০ খ্রিস্টাব্দে৷

Ä বাংলা ভাষার যুগ বিভাগঃ
বাংলা ভাষার উত্পত্তি থেকে বর্তমান পর্যন্ত কালকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ যথা-
প্রাচীন যুগ       ঃ ৭০০ বা ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ এ যুগের সাহিত্য নিদর্শন-চর্যাপদ৷
মধ্যযুগ           ঃ ১২০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে বলে মধ্যযুগ৷ এ যুগের সাহিত্য নিদর্শন হচ্ছে- ইউসুফ জোলেখা, মঙ্গল কাব্য, বৈষ্ণব পদাবলী ইত্যা িদ৷
আধুনিক যুগ     ঃ ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়কে বলে আধুনিক যুগ৷ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যারসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্‌দীন প্রমুখ এ যুগের কবি সাহিত্যিক৷

Ä বাংলা ভাষার বিভিন্ন রূপঃ
পৃ িথবীতে প্রচলিত প্রত্যেক ভাষারই দুইটি রূপ আছে৷ যথা-     ১৷ মৌলিক বা কথ্যরূপ     এবং     ২৷ লেখ্যরূপ৷
¯ মৌলিক বা কথ্যরূপঃ যে ভাষায় মানুষ সাধারণভাবে মনের ভাব একে অপরের নিকট প্রকাশ করে তাকে মৌখিক ভাষা বলে৷ এ ভাষাকে কথ্য বা আঞ্চলিক ভাষাও বলা হয়ে থাকে৷ অঞ্চলভেদে এ ভাষা ভিন্ন রকম হয়ে থাকে৷ যেমন-
এক জনের দুটি পুত্র ছিল৷
ঢাকা (মানিকগঞ্জ)         - য়্যাক জনের দুইডী ছাওয়াল আছিলো৷
নোয়াখালী (হাতিয়া)       - একজন মাইনসের দুগা হোলা আছিল৷
রংপুর                     - এ্যাক যোন মানসের দুইকনা ব্যাটা আছিল৷
গোপালগঞ্জ                - এক ব্যাটার দুই ছাওয়াল ছিল৷
ময়মনসিংহ                - এ জনের দুই পুত্ আছিল৷
চট্টগ্রাম                              - অগ্‌গুয়া বেদোমা জামাইর পরচ্‌তাপ৷

¯ লেখ্যরূপঃ যে ভাষায় বই পত্র, সংবাদপত্রের ও দলিলপত্র লেখা হয়, তাকে লেখ্য ভাষা বলে৷
লেখ্য ভাষা দুই প্রকার৷ যথা-        ১৷ সাধু ভাষা       এবং     ২৷ চলিত ভাষা৷

সাধু ভাষা
¯ যে ভাষারীতিতে সাধারণত সাহিত্য রচিত হয় এবং যা মার্জিত, ব্যাকরণের নির্দিষ্ট রীতিসম্মত তাকেই সাধু ভাষা বলে৷

Ä সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্যঃ
বাংলা সাধুরীতি সুনির্ধারিত ব্যাকরন অনুসরণ করে৷ এই কাঠামো সাধারণত অপরিবর্তনীয়৷
সাধু ভাষা পরিবর্তনশীল নয়৷
সাধু ভাষায় বক্তৃতা এবং নাটকের সংলাপের অনুপযোগী৷
সাধু ভাষাকে বলা হয় বইয়ের ভাষা৷ কারণ এ ভাষায় কেউ কথা বলে না৷
সাধু ভাষার উচ্চারণ গুরুগম্ভীর৷
সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদের ও সর্বনাম পদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহৃত হয়৷ যেমনঃ করিয়াছি, তাহারা৷

চলিত ভাষা
¯ বিভিন্ন অঞ্চলের লোকের আদর্শ কথ্যরীতি বা কথ্য ভাষাকে চলিত ভাষা বলে৷

Ä চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্যঃ
চলতি ভাষা উচ্চারণে হালকা ও গতিশীল৷
চলতি ভাষা পরিবর্তনশীল৷
চলতি ভাষায় বক্তৃতা এবং নাটকের সংলাপের উপযোগী৷
চলতি ভাষা চটুল, জীবন্ত ও লোকায়ত৷
চলতি ভাষার উচ্চারণ গুরুগম্ভীর৷
চলতি ভাষায় ক্রিয়াপদের ও সর্বনাম পদের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়৷ যেমনঃ করেছি, তারা৷






[ উপরিক্ত ছকে বাংলা ভাষার শেণিকরণটি দেখানো হল৷ ]

Ä সাধু চলিত ভাষার পার্থক্যঃ
সাধু ও চলিত ভাষার রূপগত প্রভেদ আছে৷ উভয় বিষয়ের বৈশিষ্ট্য আলাদা৷ এদে মধ্যে পার্থক্য রয়েছে৷ নিন্মে এগুলো দেয়া হল-
পার্থক্যের বিষয়
সাধু ভাষা
চলিত ভাষা
সংজ্ঞাগত
বাংলা ভাষার সাহিত্যিক রূপকে সাধু ভাষা বলে৷
অঞ্চলভিত্তিক ব্যবহৃত বা মৌখিক ভাষাকে চলিত ভাষা বলে৷
ব্যাকরণগত
সুনির্ধারিত ও ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করে চলে৷
অনির্ধারিত ও ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করে চলে না৷
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে
গদ্য, সাহিত্য, চিঠিপত্র ও দলিল লিখনে ব্যবহার হয়৷
বক্তৃতা, আলাপ-আলোচনা ও নাট্য সংলাপে ব্যবহার হয়৷
শব্দ প্রয়োগ
তত্সম শব্দের প্রয়োগ বেশি৷
তদ্ভব, দেশি ও বিদেশী ইত্যা িদ শব্দের প্রয়োগ বেশি৷
আবির্ভাবকাল
এটা বেশ প্রাচীন ভাষা৷
এটা আধুনিক ভাষা৷
সময়গত
বলতে ও লিখতে বেশি সময় লাগে৷
বলতে ও লিখতে কম সময় লাগে৷
সংলাপগত
নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতায় অনুপযোগী৷
নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতায় উপযোগী৷
শ্রুতিগত
শ্রুতিকঠোর ও দুর্বোধ্য৷
শ্রুতিমধুর ও সহজবোধ্য৷
মনোভাবগত
সাধুভাষা মনোভাব প্রকাশের উপযোগী নয়৷
সাধুভাষা মনোভাব প্রকাশের উপযোগী৷
উদাহরণ
তাহারা বাড়ি যাইতেছে৷
তারা বাড়ি যাচ্ছে৷
    
        Ä গুরুচণ্ডালী দোষঃ
          বাঙলা ভাষার দুইটি রূপ আছে৷ তাদের মধ্যে একটি সাধু আরেকটি চলিত৷ উভয় ভাষারীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান৷ তাই সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণ অসঙ্গত ও অশুদ্ধ৷ ভাষারীতি এ অশিষ্ট প্রয়োগকে গুরুচণ্ডালীদোষবলা হয়৷ অন্যভা েবলা যায় দুই ভাষার মিলনে তৃতীয় রূপেপ্রকাশ ঘটে, তাই গুরুচণ্ডালীদোষ৷ যেমন - “ধরণীর ম্যে সবচেয়ে বড়ো জিনিস জানিবার ও বুঝিবার প্রবৃত্তি মানুষের মন থেকে যেদিন চলিয়া যাবে সেদিন আবার মানুষ পশুত্ব লাভ করবে৷
       
        সাধু ভাষা        ধরণীর মধ্যে যাহা সবচাইতে বড়ো জিনিস তাহা জানিবার ও বুঝিবার প্রবৃত্তি মানুষের মন হইতে যেই দিন চলিয়া যাইবে সেই দিন মানুষ আবার পশুত্ব লাভ করবে৷
চলিত ভাষা    ধরণীর মাঝে যা সবচেয়ে বড়ো জিনিস জানবার ও বুঝবার প্রবণতা মানুষের মন থেকে যেদিন চলিয়া যাবে সেদিন মানুষ আবার পশুত্ব লাভ করবে৷