Ä ভাষার সংজ্ঞাঃ
¯ মানুষ তার বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক
ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি দ্বারা যে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকেই ভাষা বলে৷
¯ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে, ‘মানুষ্য জাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে তাকে
ভাষা বলে৷’
¯ ড. সুকুমার সেনের ম,ে
‘মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনি সমষ্টিই ভাষা’৷
Ä বাংলা ভাষার সংজ্ঞাঃ
¯ যে ভাষায় বাঙালি জাতি তারে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকে বাংলা ভাষা বলে৷
Ä বাংলা ভাষার উত্পত্তিঃ
¶ বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রাচীন যে সাহিত্য নিদর্শন পাওয়া গেছে তার বয়স হাজার
বছরেরও বেশি৷ প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা পরবর্তিত হয়ে মাগধী রূপ লাভ করে৷ এ মাগধী অপভ্রংশ
থেকে বাংলা ভাষার উত্পত্তি৷ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে,
বাংলা ভাষার প্রথম লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায় ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে৷ অপর
িদকে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলা সাহিত্যেও উত্পত্তি ৯৫০ খ্রিস্টাব্দে৷
Ä বাংলা ভাষার যুগ বিভাগঃ
¶ বাংলা ভাষার উত্পত্তি থেকে বর্তমান পর্যন্ত কালকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷
যথা-
প্রাচীন যুগ ঃ ৭০০ বা ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ এ যুগের সাহিত্য নিদর্শন-চর্যাপদ৷
মধ্যযুগ ঃ ১২০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে বলে মধ্যযুগ৷ এ
যুগের সাহিত্য নিদর্শন হচ্ছে- ইউসুফ জোলেখা, মঙ্গল কাব্য, বৈষ্ণব পদাবলী ইত্যা িদ৷
আধুনিক যুগ ঃ ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়কে বলে আধুনিক যুগ৷ ঈশ্বরচন্দ্র
বিদ্যারসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন প্রমুখ এ যুগের কবি সাহিত্যিক৷
Ä বাংলা ভাষার বিভিন্ন
রূপঃ
¶ পৃ িথবীতে প্রচলিত প্রত্যেক ভাষারই দুইটি রূপ আছে৷ যথা- ১৷ মৌলিক বা কথ্যরূপ এবং ২৷ লেখ্যরূপ৷
¯ মৌলিক বা কথ্যরূপঃ যে ভাষায় মানুষ সাধারণভাবে মনের ভাব একে অপরের নিকট প্রকাশ
করে তাকে মৌখিক ভাষা বলে৷ এ ভাষাকে কথ্য বা আঞ্চলিক ভাষাও বলা হয়ে থাকে৷ অঞ্চলভেদে
এ ভাষা ভিন্ন রকম হয়ে থাকে৷ যেমন-
“এক জনের দুটি পুত্র ছিল৷”
ঢাকা (মানিকগঞ্জ) - য়্যাক জনের দুইডী ছাওয়াল
আছিলো৷
নোয়াখালী (হাতিয়া) - একজন মাইনসের দুগা হোলা
আছিল৷
রংপুর -
এ্যাক যোন মানসের দুইকনা ব্যাটা আছিল৷
গোপালগঞ্জ -
এক ব্যাটার দুই ছাওয়াল ছিল৷
ময়মনসিংহ -
এ জনের দুই পুত্ আছিল৷
চট্টগ্রাম -
অগ্গুয়া বেদোমা জামাইর পরচ্তাপ৷
¯ লেখ্যরূপঃ যে ভাষায় বই পত্র, সংবাদপত্রের ও দলিলপত্র
লেখা হয়, তাকে লেখ্য ভাষা বলে৷
¶ লেখ্য ভাষা দুই প্রকার৷ যথা- ১৷ সাধু ভাষা এবং ২৷ চলিত ভাষা৷
সাধু ভাষা
¯ যে ভাষারীতিতে সাধারণত সাহিত্য রচিত হয় এবং যা মার্জিত, ব্যাকরণের নির্দিষ্ট রীতিসম্মত তাকেই সাধু ভাষা বলে৷
Ä সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্যঃ
বাংলা
সাধুরীতি সুনির্ধারিত ব্যাকরন অনুসরণ করে৷ এই কাঠামো সাধারণত অপরিবর্তনীয়৷
সাধু ভাষা পরিবর্তনশীল নয়৷
সাধু ভাষায় বক্তৃতা এবং নাটকের সংলাপের অনুপযোগী৷
সাধু ভাষাকে বলা হয় বইয়ের ভাষা৷ কারণ এ ভাষায় কেউ কথা বলে না৷
সাধু ভাষার উচ্চারণ গুরুগম্ভীর৷
সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদের ও সর্বনাম পদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহৃত হয়৷ যেমনঃ
করিয়াছি, তাহারা৷
চলিত ভাষা
¯ বিভিন্ন অঞ্চলের লোকের আদর্শ কথ্যরীতি বা কথ্য ভাষাকে চলিত ভাষা বলে৷
Ä চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্যঃ
চলতি
ভাষা উচ্চারণে হালকা ও গতিশীল৷
চলতি ভাষা পরিবর্তনশীল৷
চলতি ভাষায় বক্তৃতা এবং নাটকের সংলাপের উপযোগী৷
চলতি ভাষা চটুল, জীবন্ত ও লোকায়ত৷
চলতি ভাষার উচ্চারণ গুরুগম্ভীর৷
চলতি ভাষায় ক্রিয়াপদের ও সর্বনাম পদের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়৷ যেমনঃ
করেছি, তারা৷
[ উপরিক্ত ছকে বাংলা ভাষার শেণিকরণটি
দেখানো হল৷ ]
Ä সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্যঃ
¶ সাধু ও চলিত ভাষার রূপগত প্রভেদ আছে৷ উভয় বিষয়ের বৈশিষ্ট্য আলাদা৷ এদে মধ্যে
পার্থক্য রয়েছে৷ নিন্মে এগুলো দেয়া হল-
|
পার্থক্যের বিষয়
|
সাধু ভাষা
|
চলিত ভাষা
|
|
সংজ্ঞাগত
|
বাংলা ভাষার সাহিত্যিক রূপকে সাধু
ভাষা বলে৷
|
অঞ্চলভিত্তিক ব্যবহৃত বা মৌখিক
ভাষাকে চলিত ভাষা বলে৷
|
|
ব্যাকরণগত
|
সুনির্ধারিত ও ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ
করে চলে৷
|
অনির্ধারিত ও ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ
করে চলে না৷
|
|
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে
|
গদ্য, সাহিত্য,
চিঠিপত্র ও দলিল লিখনে ব্যবহার হয়৷
|
বক্তৃতা, আলাপ-আলোচনা ও নাট্য সংলাপে ব্যবহার হয়৷
|
|
শব্দ প্রয়োগ
|
তত্সম শব্দের প্রয়োগ বেশি৷
|
তদ্ভব, দেশি ও বিদেশী
ইত্যা িদ শব্দের প্রয়োগ বেশি৷
|
|
আবির্ভাবকাল
|
এটা বেশ প্রাচীন ভাষা৷
|
এটা আধুনিক ভাষা৷
|
|
সময়গত
|
বলতে ও লিখতে বেশি সময় লাগে৷
|
বলতে ও লিখতে কম সময় লাগে৷
|
|
সংলাপগত
|
নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতায় অনুপযোগী৷
|
নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতায় উপযোগী৷
|
|
শ্রুতিগত
|
শ্রুতিকঠোর ও দুর্বোধ্য৷
|
শ্রুতিমধুর ও সহজবোধ্য৷
|
|
মনোভাবগত
|
সাধুভাষা মনোভাব প্রকাশের উপযোগী
নয়৷
|
সাধুভাষা মনোভাব প্রকাশের উপযোগী৷
|
|
উদাহরণ
|
তাহারা বাড়ি যাইতেছে৷
|
তারা বাড়ি যাচ্ছে৷
|
Ä গুরুচণ্ডালী
দোষঃ
¶ বাঙলা ভাষার দুইটি রূপ আছে৷ তাদের মধ্যে একটি সাধু আরেকটি চলিত৷ উভয় ভাষারীতির
মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান৷ তাই সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণ অসঙ্গত ও অশুদ্ধ৷
ভাষারীতি এ অশিষ্ট প্রয়োগকে ‘গুরুচণ্ডালীদোষ’ বলা হয়৷ অন্যভা েবলা যায় দুই ভাষার মিলনে ‘তৃতীয়
রূপে‘ প্রকাশ ঘটে, তাই ‘গুরুচণ্ডালীদোষ’৷ যেমন - “ধরণীর ম্যে সবচেয়ে বড়ো জিনিস জানিবার ও বুঝিবার প্রবৃত্তি মানুষের মন থেকে
যেদিন চলিয়া যাবে সেদিন আবার মানুষ পশুত্ব লাভ করবে৷”
সাধু ভাষা ঃ “ধরণীর মধ্যে যাহা সবচাইতে বড়ো জিনিস তাহা জানিবার
ও বুঝিবার প্রবৃত্তি মানুষের মন হইতে যেই দিন চলিয়া যাইবে সেই দিন মানুষ আবার পশুত্ব
লাভ করবে৷”
চলিত ভাষা ঃ “ধরণীর
মাঝে যা সবচেয়ে বড়ো জিনিস জানবার ও বুঝবার প্রবণতা মানুষের মন থেকে যেদিন চলিয়া যাবে
সেদিন মানুষ আবার পশুত্ব লাভ করবে৷”